শক্তিশালী ও স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক, কার্যকর আইন ও বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার অবসান সবচেয়ে জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।
রাজনৈতিক ধারায় ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ও ব্যবসার সঙ্গে রাজনীতির পৃথকীকরণ করা না হলে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা অসম্ভব বলে গোলাম রহমান দাবি করেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদকের চেয়ারম্যান এ দাবি করেন।
‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, বর্তমান বাস্তবতা ও নাগরিক উদ্বেগ’ শীর্ষক বৈঠকে সুজনের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বদিউল আলম মজুমদার।
দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, ‘দুর্নীতি নির্মূল করার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। কিন্তু তারাও পারছে না। কারণ রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসা এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। ব্যবসা ও রাজনীতির এই আঁতাতের মধ্যেই রয়েছে দুর্নীতির সূত্রপাত।’ বিশেষ করে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি এই আঁতাত ভাঙা দরকার বলে মন্তব্য করেন।
দুদকের চেয়ারম্যান সংসদীয় কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কমিটি তাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যগুলো দুদকে পাঠাচ্ছে এবং দুদক নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে তদন্ত করে সেগুলোর ওপর কাজ করছে। ফলে সংসদীয় কমিটির কাজ লোক দেখানো, এটা আমি মনে করি না।’
প্রধানমন্ত্রীর মামলা প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দোষী কি নির্দোষ, তা প্রমাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিচারিক আদালতে গিয়েছেন। তিনি হাইকোর্টের প্রতি আস্থা রাখছেন, ফলে তিনি যে দুদককে প্রভাবিত করছেন না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর যে অঙ্গীকার রয়েছে, এটা তারই প্রমাণ।’ এ ছাড়া জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া দুর্নীতি দমনের কোনো প্রয়াস সফল হবে না উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দেশবাসী দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারছে না বলে আমরা উদ্বিগ্ন।’
মোজাফফর আহমদ বলেন, কেবল আইন করে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সক্রিয়তারও প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংস্কার’ এবং ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের’ ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ ছাড়া অঙ্গীকার অনুসারে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণী, প্রধান বিচারপতির খরচের বিবরণী পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানান মোজাফফর আহমদ।
মূল প্রবন্ধে বদিউল আলম মজুমদার জানান, মহাজোট সরকার দুর্নীতি দমনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখনো তারা গ্রহণ করেনি।
কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এমনকি কোনো রকমের শাস্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়নি। বরং সরকারের এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বিপরীত ইঙ্গিতই বহন করে।
সরকার দুদকের আইন পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্বল ও অকার্যকর করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। সংসদের পক্ষ থেকেও দুর্নীতি দূরীকরণে কোনো বলিষ্ঠ ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ দেখা যায় না। উচ্চ আদালতের আচরণেও অনেকেই উদ্বিগ্ন, যদিও হাবিবুর রহমান মোল্লার মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে জাতি কিছুটা আশান্বিত হয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে ফায়দাতন্ত্রের চর্চায় দুর্নীতির ধরন বদলে যাচ্ছে, উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতাধররা এখন চুক্তির একটি অংশ আর ঘুষ হিসেবে নিয়েই সন্তুষ্ট নন। তাঁরা পুরো কার্যক্রমকেই তাঁদের কর্মী, সমর্থক ও আপনজনদের মধ্যে ফায়দা প্রদানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর। ফলে কোনো কার্যক্রমই যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় না। একই সঙ্গে ফায়দাতন্ত্রের অংশ হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব প্রভৃতি বিস্তারলাভ করছে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন