
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। তারা মনে করে, এসব অপরাধের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজন নেই। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলেও মনে করে দলটি। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।
আজ দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব দলের এ অবস্থান তুলে ধরেন। আগের রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের এ অবস্থান ঠিক হয় বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ জানতে চায়, সরকার আসলেই অপরাধীদের বিচার করতে চায়? না কি দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি সমস্যা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিপর্যন্ত ও বিক্ষুব্ধ জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। জনগণ এটাও বুঝতে চায় যে সরকার সত্যিই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে চায়, না কি এই প্রক্রিয়ার আবরণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে চায়।’
আপনাদের দলের কাউকে কি সরকার লক্ষ্যবস্তু করেছে? জানতে চাইলে খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, ‘তারা তো একেকবার একেকজনের কথা বলেছে। তারা তালিকা পাঠিয়েছে বা কাগজে ছেপেছে। এর মধ্যে আমাদের দলের লোকের নামও দিয়েছে। অন্যদের নামও দিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা যাদেরকেই তারা ঘায়েল করা প্রয়োজন বলে মনে করবে, তাদের জন্যই এই অস্ত্রটা প্রয়োগ করবে।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে কী হবে—জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কেউ কি ইচ্ছা করে দেখবে যে আমাকে হত্যা করছে? তা কেউ দেখে না বিএনপিও দেখবে না।’
লিখিত বক্তব্যে মহাসচিব বলেন, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কখনো কেউ বিরোধিতা করেনি। সব সময় বলা হয়েছে যে বিচার যেন স্বচ্ছ হয়, বিচার যেন প্রকৃত অপরাধীদের হয় এবং বিষয়টিকে যেন রাজনৈতিকীকরণ করা না হয়। সরকার এত দিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেছে। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও তাই বলা হয়েছে। কিন্তু এখন তারা সে কথা থেকে সরে এসেছে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
খোন্দকার দেলোয়ার আরও বলেন, ‘এখন সরকার বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে। এ ব্যাপারে যেসব অপরাধের কথা বলা হচ্ছে, তা হলো—হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও অপহরণ। এসব অপরাধ সত্যিই কেউ করে থাকলে তাদের বিচারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এসব অপরাধের বিচারের সুস্পষ্ট বিধান বাংলাদেশ পেনাল কোডেই রয়েছে এবং এই বিচার ফৌজদারি কার্যবিধিতেই করা সম্ভব এবং তা-ই করা উচিত। এর জন্য কোনো বিশেষ আদালত কিংবা ট্রাইব্যুনাল কিংবা তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন নাই। আইনের নতুন কোনো সংশোধনী আনাও আইনের চোখেই গ্রহণীয় হবে না।’
বিএনপি কি তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়? এই প্রশ্নের জবাবে খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, ‘আমরা তো পরিষ্কার বলেছি, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু এখন তো যুদ্ধাপরাধী নাই।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন