পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০১০

চট্টগ্রামে আন্দোলনের রিহার্সেল হলো: খালেদা ‘ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে আমাকে বিমানে তোলার হুমকি দিয়েছিল’


বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রস্তুত থাকতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি বলেন, ‘আজকের মহাসমাবেশ আন্দোলনের রিহার্সেল (মহড়া) চট্টগ্রামের পর দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে বিএনপির নেত্রী বলেন, ‘বিদেশে যেতে চাইনি বলে তারা আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বিমানে তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে বিভাগীয় মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর সর্বশেষ তিনি লালদীঘি মাঠে বক্তৃতা করেছিলেন নাশকতার আশঙ্কায় গতকাল লালদীঘি মাঠ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় মোতায়েন করা হয় পাঁচ শতাধিক পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় বেগম জিয়া লালদীঘি মাঠে উপস্থিত হন বিকেল পাঁচটা ছয় মিনিট থেকে তিনি টানা এক ঘণ্টা সাত মিনিট বক্তৃতা করেন নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, ১০ টাকা দরে চাল খাওয়াবে, বিনা মূল্যে সার দেবে বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় এসেছে দেড় বছরে কতজন চাকরি পেয়েছে? তিনি বলেন, এই ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে চায়নি মানুষ ডিজিটালের নামে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, মানুষ তা উপলব্ধি করছে এই চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলো সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আন্দোলন
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে প্রতিদিন ১০ জন করে মানুষ খুন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এগুলো দেখেন কিনা জানি না দেশের কোথায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবে, সেদিকেই তাঁদের নজর আসলে এই সরকার মামলাবাজ সরকার, চুক্তিবাজ সরকার দেশের মানুষকে দেওয়া কোনো ওয়াদা তারা পূরণ করেনি কিন্তু বিদেশিদের দেওয়া ওয়াদা তারা পালন করছে
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের তীব্র সংকট মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী সংসদে ও বাইরে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলছেন আমাদের সময় নাকি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন হয়নি অথচ আমরা জাতীয় গ্রিডে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ করেছিলাম আরও আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নতুন বিদ্যুৎ প্লান্ট করতে অর্থের সংস্থান করেছিলাম ফখরুদ্দীনের সরকার সেটা করেনি এই দেশকে তারা বিশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে
বেগম জিয়া বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের আজ মোমবাতি দিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে নতুন কলকারখানা হচ্ছে না, বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে না এই সরকার বিদ্যুৎ দিতে পারে না, গ্যাস দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না’ প্রশাসন অচল দাবি করে তিনি বলেন, এই সরকার ৪৫০ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেছে তাই প্রশাসন আজ অচল হয়ে পড়েছে
বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের এক নম্বর থেকে নিচে পর্যন্ত সবাই চোর আখ্যায়িত করে বলেন, দেশে টেন্ডারবাজি, দোকান দখল, হাট দখল, বাড়ি দখল এমনকি গোরস্থানও দখল করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সরকার কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় আসে, দেশে ততবার সন্ত্রাস বাড়ে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনের কথা আপনাদের স্মরণ আছে? ওই সময় তারা প্রতি জেলায় গডফাদার তৈরি করেছিল
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে বেগম জিয়া বলেন, ‘শহীদ জিয়া চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকে এই সত্য স্বীকার করেছেন’ শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার একটি লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব নন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক ওয়াজেদ মিয়ার ওই লেখা একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত হয়
ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, ট্রানজিট, করিডরসহ ভারতকে সবকিছুই দিয়ে এসেছেন কিন্তু তাঁর বাবার চুক্তি অনুযায়ী তিনবিঘা করিডর ফেরত আনতে পারেননি তিনি বলেন, জঙ্গির ভয় দেখিয়ে দেশবাসীকে দমিয়ে রাখা যাবে না, বিদেশিদেরও বেশি দিন খুশি রাখা যাবে না জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ফখরুদ্দীন ক্ষমতা নিতে পারে না তারা ফখরুদ্দীনকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল পেছনে ছিল মঈনউদ্দিন আর আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিল মামলার পরই গ্রেপ্তার করল আমাকে বিদেশে পাঠানোরও ষড়যন্ত্র হলো আমি বলেছি, এ দেশে জন্ম আমার বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই তারপর জেলখানায় গিয়েছি আজ আপনাদের কাছে বলছি ওদের কত নোংরা চিন্তা ছিল আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বিমানে তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল
মহাসমাবেশে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ নাই, গ্যাস নাই; আপনারা ব্যস্ত আছেন বিচারে বাবার বিচার করেছেন, এখন ইয়াহিয়া আমলের বিচার নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? আগে নিজেদের অপরাধের বিচার করুন শুনেছি, তারা নাকি আমার বিচার করবে ৩১ বছর চট্টগ্রামবাসী আমার বিচার করেছে এই বিচারের রায় আমার পক্ষে গেছে কোনো কোনো মন্ত্রী বলেন, যেকোনো সময় আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে এ ধরনের কিছু হলে চট্টগ্রামবাসীকেই করণীয় ঠিক করতে হবে
মহাসমাবেশ ঘিরে বিকেল থেকে লালদীঘি মাঠে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা-উপজেলা থেকে মিছিলসহ কর্মী-সমর্থকেরা আসতে থাকেন সমাবেশস্থলে ভিড় বেশি হওয়ায় কর্মী-সমর্থকেরা ছড়িয়ে পড়েন লালদীঘির আশপাশের এলাকায় বিপণিবিতান থেকে শুরু করে কোতোয়ালি মোড়, সিনেমা প্যালেস থেকে বকশিরহাট হয়ে লালদীঘি পর্যন্ত প্রায় চার বর্গকিলোমিটার জায়গা ছিল লোকে লোকারণ্য এসব এলাকায় ২২০টি মাইক টাঙানো হয় সরাসরি দেখার সুবিধার জন্য নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১২টি এলসিডি টিভি দেওয়া হলেও বেশির ভাগ সময় সেগুলো অচল ছিল

কোন মন্তব্য নেই: